খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প - সেরা ভালোবাসার গল্প bangla sad love story in bangla font

bangla sad love story in bangla font
 

সেরা ভালোবাসার গল্প

এই ভালোবাসার গল্পটা দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রথম অংশ আমাদের একটি অ্যাপস এর মাঝে দেওয়া আছে সেই অ্যাপসটি গুগল প্লে স্টোর আছে আপনি চাইলে প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে পড়তে পারেন:  ➣  প্রথম অংশ 

এবং দ্বিতীয় অংশ আমাদের এই পোস্ট এ সম্পূর্ণ দেওয়া আছে


দ্বিতীয় অংশ ⬇ 
এখানে একটা বাড়ি করার ইচ্ছা করেছি।
একটা পুকুরও কাটাব। আপনারা আবার দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আপনাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে বলব না। আপনারাই ঐ বাড়িতে থেকে দেখাশােনা করবেন। আমরা মাঝে মাঝে এসে বেড়িয়ে যাব।

সাইফুলের আব্বা ওসমান ক্ষেতে-খামারে কাজ করলে কি হবে, সৎ ও ধার্মিক ছিল। বলে গ্রামের প্রায় সকলে তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করত, জহুরও করত। সাইফুলের কথা শুনে আবার তার চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল। বলল, তােমার আব্বা ও আম্মার মতাে লােক এযুগে খুব কম দেখা যায়। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতি করুক। তুমিও তােমার বাপের মতাে হয়েছ। তােমাকে আল্লাহ বড় করেছে, আরাে করুক। তােমাদেরকে সুখী করুক।

সিতারা বানু সরু চাকলি করে দুধ চিনিতে ভিজিয়ে মেয়েকে ডেকে বললেন, কিরে শুধু গল্প করবি নাস্তা খাওয়াবি না? তারানা বলল নাস্তা তৈরি করতে তােমারই তাে দেরি হল । দাও নিয়ে যাই।।

নাস্তা খেয়ে আসরের নামায পড়ে সাইফুল ঝর্ণাকে নিয়ে তিস্তা নদীর পাড়ে হাঁটতে হাটতে একটা বট গাছের তলায় বসল। কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, জান ঝর্ণা; স্কুলে পড়ার সময় এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয় ছিল। প্রতিদিন বিকেলে। এখানে বসে সন্ধ্যে পর্যন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতাম, আর তােমার কথা ভাবতাম।। তুমি কবে থেকে আমার কথা ভাবতে?

কষ্টের ভালোবাসার গল্প

স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম যেদিন ক্লাসে গেলাম, সেদিন তােমাকে দেখে আমার খুব ভালাে লাগল। তারপর তােমার পরিচয় পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনকে মানাতে পারি নি। তাই তােমার দিকে যখন তখন করে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে। মাঝে তােমার চোখে চোখ পড়ে গেলে তুমি রাগে মুখ ফিরিয়ে নিতে।। তােমাকে দেখলেই আমি রেগে যেতাম এবং আমার ঘৃণা হত, একথা জানার পরও ঐভাবে চিঠি দিলে কেন? তখন তােমার ভয় করে নি?

প্রথম দিকে ভালবাসা-টালবাসা তাে বুঝতাম না। ছােটবেলা থেকে আমি সুন্দর। জিনিষ খুব ভালবাসি। তাই তােমাকে খুব সুন্দরী দেখে শুধু দেখতাম। নাইনে উঠার পর। তােমাকে ভালবেসে ফেললাম। তখন মনে হত তােমাকে ছাড়া অন্য কোনাে মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। সে সময়ে ভয়ে তােমাকে কিছু জানাতে পারি নি।

তারপর টেস্ট পরীক্ষার পর তােমাকে আর দেখতে পাব না মনে করে ভালবাসার কথা জানাবার জন্য আমার মন পাগল হয়ে উঠেছিল। আর একটা কথা মনে হয়েছিল, আমি তােমাকে ভালবাসি জানার পর তুমি হয়ত একটু নরম হবে। তাই সাহস করে চিঠি দিয়েছিলাম।

| হেডস্যারের হাতে মার খাওয়ার পর আমার ওপর তােমার রাগ হয় নি? অথবা আমার প্রতি তােমার ভালবাসা ছুটে যায় নি? যদি তাই হত, তা হলে তােমাকে কি আজ পেতাম?

ঝর্ণা অশ্রুভরা চোখে বলল, সেসব কথা মনে হলে আমি মরমে মরে যাই। আমার মনের মধ্যে যে কি রকম অনুশােচনা ও কষ্ট হচ্ছে তা আল্লাহকে মালুম। চোখ মুছে আবার বলল, সেসবের জন্যে তুমি যদি কিছু শাস্তি দিতে, তা হলে হয়ত কিছুটা শান্তি পেতাম।।
আমি শাস্তি দেয়ার আগেই তাে কাদছ। শাস্তি দিলে কি করবে তা হলে? তােমার। কোনাে ব্যবহারই আমার মনে প্রতিহিংসা জাগাতে পারে নি। কারণ আমি আমার 

বাংলা ভালোবাসার গল্প

ভাগ্যকে সব সময় মেনে নিয়ে সবর করে থাকি। তাই আল্লাহ সেই সবরের ফলস্বরূপ চিরকাঙ্ক্ষিত ঝর্ণাকে দান করে আমাকে ন্য করেছেন। পরে তুমিও তােমার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে পাওয়ার জন্য সবর করেছিলে। তাই তিনি তােমারও মনের আশা পূরণ করেছেন। একটা কথা জেনে নাও, সবরের গাছ খুব তীতা আর ফল খুব মিষ্টি। আমরা সবর করার দরুন তিনি আমাদের মনের আশা পূর্ণ। করেছেন। সেজন্যে আমরা চিরকাল তার শােকর গােজার করতে থাকব। খুব খাঁটি কথা বলেছ। এবার চল মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে আসছে।

ঝর্ণার ভাবিরা ননদের পেটে বাচ্চা আছে জানতে পেরে মহা খুশী। তারা শাশুড়ীকে সে কথা বলতে আফসানা বেগম আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্বামীকে জানালেন। হামিদ সাহেব শুনে শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে হাসি মুখে বললেন, ওকে দেখে। আমি সেই রকমই অনুমান করেছিলাম। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। আফসানা বেগম বললেন, শুধু আনন্দ পেলে চলবে? মেয়ে জামাইকে একদিন ভালাে করে খাওয়াতে হবে। হামিদ সাহেব বললেন, ওরা কি রােজ খারাপ খাচ্ছে?

আফসানা বেগম হেসে উঠে বললেন, তুমি অত জ্ঞানীলােক হয়ে আমার এই সামান্য কথা বুঝতে পারলে না। মেয়েদের পেটে প্রথম বাচ্চা এলে তাকে নানারকম পিঠে-পাঠা ও ভালাে-মন্দ জিনিস করে খাওয়াতে হয়, বুঝেছ?
হামিদ সাহেবও হেসে উঠে বললেন, আবসার যখন তােমার পেটে ছিল তখন তােমার আব্বা-আম্মা বুঝি তাই করে খাইয়েছিলেন? আফসানা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, খাইয়েছিলেন বইকি। ফিরে আসার সময় আমাদেরকে নতুন জামা-কাপড়ও পরিয়ে বিদায় করেছিলেন। তুমি সেসব ভুলে গেলে কি করে? আমাদেরকে এখন সেইসব করতে হবে।

হামিদ সাহেব বললেন, ওসব মেয়েদের ব্যাপার, আমাদের মনে থাকে না। যা করার তাই কর। তােমাকে নিষেধ করেছে কে? আফসানা বেগম বললেন, তাতাে করবই।
পনের দিন পর ওরা ঢাকায় ফিরে এল। ঢাকায় ফেরার কয়েকদিন পর একদিন বেশ রাত করে সাইফুল বাসায় ফিরলে ঝর্ণা জিজ্ঞেস করল, আজ এত দেরি হল যে?। আজ অফিসে একটা পার্টি দিয়েছিলাম, সেই জন্য দেরি হল।

পার্টির কথা শুনে ঝর্ণার আমিনের পার্টির কথা মনে পড়ল। ভাবল, সে রকম পার্টি। নয় তাে? মনে হচ্ছে কিছু যেন ভাবছ? পার্টিতে মেয়ে মানুষ থাকে তাই না?
সাইফুল হেসে উঠে বলল, মদ, মেয়ে মানুষ না হলে পার্টিই হয় না। এটা পার্টির । প্রধান উপকরণ। হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করলে কেন? 

ভালোবাসার গল্প

পাটির কথা মনে হলে, প্রচণ্ড ঘৃণা ও ভয় হয়। আমাকে কি তুমি অবিশ্বাস কর? |
ঝর্ণা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, তােমাকে অবিশ্বাস করার আগে। যেন আমার মৃত্যু হয়।
সাইফুল তার পিঠে আদরের চপেটাঘাত করে বলল, এরকম কথা বলতে নিষেধ করেছি না। তারপর তাকে খাটে বসিয়ে বলল, প্রথম ব্যবসায় নেমে পাটিতে মদ ও মেয়ে মানুষের দিকে কোনাে নজর দিই নি। তােমার বিয়ের পর মদের দিকে ঝুঁকে পড়লেও তােমার স্মৃতি মেয়ে মানুষের নেশা থেকে রক্ষা করেছে। আর এখন তােমাকে পেয়ে মদও ছেড়েছি। এর ফলে তােমার ব্যবসায় ক্ষতি হয় না? আমি তাে জানি ব্যবসায় বড় বড় অর্ডার আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্ত্রীকে ডানাকাটা পরীর মতাে সাজিয়ে হত্তাকত্তাদের মন জুগিয়ে কাজ হাসিল করে।।

তােমার জানাকে অস্বীকার করব না। আজকাল শতকরা নিরানব্বই জন ব্যবসায়ী তাই করে। তারা এই জন্য করে, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে টাকাটা বড়। আমিও প্রথম প্রথম মেয়ে মানুষ ভাড়া করে এনে লাভারের ভূমিকায় অভিনয় করে কাজ হাসিল। করেছি। 

এখন পার্টি করলেও মদ ও মেয়েমানুষ বাদ দিয়ে করছি। তােমার সান্নিধ্যে এসে আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন, টাকার চেয়ে ধর্ম বড়।' সেইজন্যে মনে হয়, আল্লাহ মদ ও মেয়ে মানুষ ছাড়াই আমার কাজ হাসিল করিয়ে দিচ্ছেন। তাই পাটি শেষে মসজিদে এশার নামাযের দু'রাকাত শােকরানার নামায পড়ে এলাম। ঝর্ণা শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বামীর দুটো হাত ধরে বলল, তােমাকে পার্টির ঐ সব কথা জিজ্ঞেস করে অন্যায় করে ফেলেছি। মাফ করে দাও। সাইফুল দুষ্টুমী করে বলল, যদি না করি? তা হলে পায়ে ধরে কাদব। . আগে তাই করে দেখাও, তারপর চিন্তা করব।

ঝর্ণা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বসে তার পায়ে হাত দিতে গেলে সাইফুল তাকে ধরে বুকে জড়িয়ে বলল, যাও, মাফ করে দিলাম। তারপর বলল, তােমার কোনাে অন্যায়। হয় নি। আমি তােমার সঙ্গে একটু জোক করছিলাম। তােমার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে যে জিজ্ঞেস করেছ, তা আমি বুঝতে পেরেছি। তা ছাড়া তােমার কথা তাে মিথ্যে না। এখন চল খেতে দেবে। খিদে পেয়েছে।

ওমা, পার্টি থেকে এসে খেতে চাচ্ছ, সেখানে কিছু খাওনি? খেয়েছি, তবে সামান্য। কেন?
তােমার সঙ্গে না খেলে আমার তৃপ্তি হয় না। তা ছাড়া আমি না খেলে, তুমি না খেয়ে থাকবে যে ।
আবার অন্যায় করে ফেললাম, মাফ করে দাও। বারবার তুমি অন্যায় করলে মাফ করতে পারব না। শাস্তি পেতে হবে।।

খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প 

শাস্তি যা ইচ্ছা দাও, তবু মাফ চাই। 
তা হলে আমাকে একটু আদর সােহাগ কর। ঝর্ণা স্বামীকে জড়িয়ে আদর সােহাগ করে অস্থির করে তুলল। সাইফুল ঝর্নার আদর সােহাগে উত্তেজিত হয়ে তাকে পাজাকোলা করে চুমাে খেতে। খেতে বলল, তােমাকে নিয়ে বিছানা ...।

ঝর্ণা তাকে কথাটা শেষ করতে দিল না। তার মুখে হাত চাপা দিয়ে মেকী চোখ রাঙ্গিয়ে বলল, ভালাে হবে না বলছি। তাকে খাটে শােয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখে কাকুতিমিনতি করে বল, প্লীজ এখন ছেড়ে দাও। তুমি এসেছ সাবুর মা-জানে। সে হয়তাে বুবু ও নাজনীনকে খবরটা দিয়ে ডাইনিং টেবিল রেডী করে ফেলেছে। দেরি হলে সাবুর মাকে বুবু ডাকতে পাঠাবে। সময় তাে পালিয়ে যাচ্ছে না।

সাইফুল তাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করার সময় বলল, তােমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ঝর্ণা স্বামীকে লুংগি দিয়ে তার জামাকাপড় ব্যাকেটে রাখার সময় বলল, মনে কিছু করলে? করেছি। তবে তুমি যদি পালিয়ে যাওয়া সময়টা ধরে এনে আমার কাছে ধরা দাও, তা হলে মনে কিছু করব না।।

হয়েছে হয়েছে, অত ন্যাকামু করতে হবে না। কখনাে ধরা দিতে আপত্তি করেছি? তা অবশ্য করনি, তবে এখন পেটে বাচ্চা তাে, তাই যদি শরীরে না কুলােয়। তােমার কি মুখে কোন লাইসেন্স ট্যাক্স নেই? একদিন ছিল। তােমাকে বিয়ে করার পর আল্লাহ সে সব মওকুফ করে দিয়েছেন। আচ্ছা, কি লােক তুমি বল তাে? কেন? ঝর্ণার স্বামী। ঝর্ণা স্বামীর কোমর জড়িয়ে বলল, আর দুষ্টুমী নয়, খেতে চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। সাইফুলও স্ত্রীর কোমর জড়িয়ে বলল, চল।।

সেরাতে আমিন ঝর্ণাকে মারার পর পার্টিতে গিয়ে সাহেবকে মিথ্যে করে বলল, গতকাল থেকে আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ তাই আসতে পারে নি। | আজিজ সাহেব শুনে খুব রেগে গেলেন। কিন্তু লােকজনের সামনে বাইরে তা । প্রকাশ করলেন না। বুঝতে পারলেন, মেয়েটা জেনেশুনে ইচ্ছা করে অসুস্থতার অজুহাত। 

দেখিয়ে এল না। ভেবে রাখলেন, দেখবাে কতদিন অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ফাকি দিতে পারে। আমিন মদে চুর হয়ে বাসায় ফিরল।।
শায়লা বেগম ছেলেকে কোনাে দিন মদ খেয়ে বাসায় ফিরতে দেখেন নি। আজ দেখে খারাপ লাগলেও কিছু বললেন না। ভাবলেন, যাওয়ার সময় বৌটাকে মারধাের। করে গেছে, মন খারাপ, তাই হয়তাে মদ খেয়ে এসেছে।

আমিন রুমে এসে নিজের খাটে ঘুমিয়ে পড়ল। তার তখন কোনাে দিকে খেয়াল। করার মতাে অবস্থা ছিল না।
শায়লা বেগম বৌ যে চলে গেছে, সে কথা প্রথম জানতে পারেন নি। মনে করেছিলেন, মার খেয়ে হয়তাে রাগ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। খাওয়ার সময় কাজের মেয়েকে বললেন, আমিন আজ বাইরে খেয়ে আসবে। তুমি বৌমার ভাত তার ঘরে দিয়ে এস।

কাজের মেয়ে ভাত নিয়ে গিয়ে ঝর্ণাকে দেখতে না পেয়ে টেবিলের উপর চাপা দিয়ে রেখে এসে বলল, আপাকে তাে ঘরে দেখলাম না।
| শায়লা বেগম চিন্তিত হয়ে ছেলের রুমে এসে দেখলেন, আজ বৌ যে শাড়িটা পরেছিল, সেটা খাটের উপর জমা করা রয়েছে। ভাবলেন, তা হলে কি বাে চলে গেছে? না কোনাে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে? তাড়াতাড়ি বাথরুম খুলে দেখলেন, নেই। কাজের মেয়েকে সব বাথরুম খুলে দেখতে বললেন। ছােট ছেলেদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, আমরা জানি না। কাজের মেয়ে ফিরে এসে বলল, কোথাও নেই। শায়লা বেগম। ভাবলেন, নিশ্চয় চলে গেছে। 

গভীর ভালোবাসার গল্প

আমিন ফিরলে তাকে কথাটা বলার জন্যে এত রাত জেগে ছিলেন। ছেলের অবস্থা দেখে আর বললেন না। সকালে ঘুম থেকে জেগে আমিনের গত রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল। স্ত্রীর খাটের দিকে তাকিয়ে শাড়িটা দেখে মনে সন্দেহ হল। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে মাকে ডাকতে ডাকতে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তােমার বৌ কোথায়?
| শায়লা বেগম বললেন, তুই চলে যাওয়ার পর বৌ ঘরেই ছিল। তারপর আর বার। হয় নি। রাতে খাওয়ার সময় খোঁজ নিয়ে দেখি নেই। কত খোঁজাখুঁজি করলাম, পেলাম । মনে হয় চলে গেছে।

আমিন ক্রুদ্ধ বাঘের মতাে গর্জন করে উঠল, তােমরা এতলােক থাকতে সে চলে গেল, তােমরা জানলে না?
শায়লা বেগম বললেন, আমরা যে যার রুমে রয়েছি। কে কখন কোথায় যাচ্ছে, জানব কি করে?
আমিন মাকে আর কিছু বলল না। নিজের রুমে আসার সময় গজ গজ করে বলল, যাবে কোথায়? যেখানেই যাক না কেন খুঁজে বের করবই। রুমে এসে বসে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে লাগল, কার কাছে যেতে পারে? ঝর্ণা যে সত্যি সত্যি চলে যাবে, এটা সে ভাবতেই পারছে না। এক এক করে তার বান্ধবীদের কথা মনে করতে লাগল। বাব- মার কাছে যে যাবে না, সে কথা নিশ্চিত। আর যদি গিয়েও থাকে, তা হলে তাে। খুব ভালই হবে। মাস খানে পরে গিয়ে পরিচয় দিয়ে তাদেরকে বলবে, আপনাদের।

ময়ে রাগ করে চলে এসেছে। তাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
আবার ভাবল, ঝর্ণা যদি তার অত্যাচারের কথা বাবা-মা ও ভাইয়েদেরকে বলে দেয়, তা হলে তাে বিপদ? কিন্তু না বলে তাে ঝর্ণাকে হাতছাড়া করা চলবে না। যেখানেই যাক না কেন ছলচাতরি করে লকে চেয়ে বুঝিয়ে সুজিয়ে আনতেই হবে। নচেৎ ব্যবসারও যেমন ক্ষতি হবে তেমনি ভবিষ্যতে তার বাবা ও ভাইদের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারবে না। কাল

বটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই হয়তাে রাগ করে কোনাে বান্ধবীর বাসায় চলে গেছে। দু'চার দিন পর রাগ পড়লে ফিরে আসবে। কিন্তু এক এক করে চার-পাঁচ মাস পরেও যখন ঝর্ণা ফিরল না তখন আমিন একজন লােককে তাদের দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে খবর নিল সেখানে যায় নি। তারপর ঝর্ণার বান্ধবীদের অনেকের কাছে খোজ নিয়ে কোনাে খবর পেল না। শেষে মাস ছয়েক পরে উকিলের ডির্ভোসের চিঠি পেয়ে বুঝল, সে ঢাকাতেই আছে। ডিভাের্সের দিন কোর্টে আমিন ঝর্ণার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু সফল হতে পারল না । কোর্ট থেকে ফিরে সে দু’টো গুণ্ডার সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করল ঝর্ণাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসার জন্য।

| গুণ্ডারা খোজ নিয়ে দেখল, খুব জাদরেল লােকের আশ্রয়ে ঝর্ণা থাকে। আমিন গুণ্ডা দ’টোকে ঝর্ণার ফটো দিয়েছিল। ঝর্ণা বাইরে বেরােবার সময় বােরখা পরে বের হয়। সেই জন্যে তারা ঝর্ণাকে চিনতে পারে না।

বছর খানেক পর আমিন জানতে পারল, ঝর্ণা যাকে কামলার ছেলে বলে ঘৃণা। করতাে, সে এখন বড় ব্যবসায়ী এবং ঝর্না তাকেই বিয়ে করেছে। জানার পর তার মাথা গরম হয়ে গেল। গুণ্ডাদেরকে সাইফুলের বাসার ঠিকানা দিয়ে বলল, সাইফুলকে মার্ডার। করে হলেও তােমরা ঝর্ণাকে আমার কাছে এনে দাও। তাতে যদি তােমাদের সঙ্গে যা। কন্ট্যাক্ট হয়েছে তার দ্বিগুণ টাকা লাগে দেব।।

গুণ্ডারা উঠে পড়ে লাগল । কিন্তু তারা শত চেষ্টা করেও সুযােগ সুবিধে করে উঠতে পারল না। তবু তারা হতাশ না হয়ে সুযােগের অপেক্ষায় রইল, ঝর্ণাকে কিডন্যাপ করার | আমিন গুণ্ডাদের কাছ থেকে সব খবর রাখছে। নিজেও লােক দিয়ে সাইফুলের অফিস থেকে তাদের অবস্থানের খবর নিয়ে গুণ্ডাদের জানাচ্ছে। বিদেশ থেকে ফেরার পর সাইফুল । অফিসে আজ পার্টি দিচ্ছে জানতে পেরে আমিন গুণ্ডাদের সেই কথা জানাল।

গুণ্ডারা সারাদিন সাইফুলের বাসার দিকে লক্ষ্য রাখল। সাইফুল পার্টি থেকে ফেরার। পর তারা গেটে এসে ছল চাতুরী করে দারােয়ানকে গেট খােলাল। ঢুকেই একজন। দারােয়ানের কানের গােড়ায় জুড়াের চাপ মেরে অজ্ঞান করে ফেলল। তারপর প্যান্টের। পকেট থেকে লাইলনের রশি বের করে হাত-পা বেঁধে গেটের আড়ালে শুইয়ে রাখল। তার মুখটা একটা বড় রুমাল দিয়ে বাধতে ভুলল না। দারােয়ানকে রেখে তারা। বারান্দায় এসে কলিং বেলে চাপ দিল।

একজন বয়স্ক চাকর একটু আগে সাহেবকে দরজা খুলে দিয়েছে। সাহেব ঢােকার পর। দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে এসে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেল। সে দরজার পাশের রুমে থাকে । তার কাজই হল, দরজা খােলা এবং বন্ধ করা। সেই জন্যে সে সাহেবের অপেক্ষায়। জেগে বসে ছিল। আবার বেল বাজতে শুনে বিরক্ত হয়ে ভাবল, এতরাতে আবার কে এল?

যেই সে দরজা খুলেছে অমনি গুণ্ডা দুটো একসঙ্গে তাকে আক্রমণ করে অজ্ঞান করে দারােয়ানের মতাে বেধে ফেলল। তারপর তাকে তার রুমে বন্ধ করে ভিতর বারান্দায়। দুটো থামের আড়ালে দু’জনে আত্মগােপন করে সুযােগের অপেক্ষায় রইল।

ঝর্ণা ও সাইফুল যখন কোমর ধরাধরি করে রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন গুণ্ডাদের একজন থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে তাদের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, হান্ডস আপ।

সাইফুল কংফু মাস্টার ছিল। বিপদের সময় কি করা উচিত তার জানা। পিছন দিক। থেকে কথাটা শুনেছে। ঝর্ণাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে প করে ঘুরে গুণ্ডাটাকে দেখে সেখান থেকে জাম্প করে উড়ে এসে তার উপর পড়ল ।
গুণ্ডাটার চোখে ধা ধা লেগে গেল ।
তার মনে হল ভেল্কী দেখছে। ঘাের কাটিয়ে ওঠার আগেই সাইফুল তার উপর পড়তে দু’জনে মেঝেয় পড়ে গের। পিমতলটা গুণ্ডাটার হাত থেকে ছিটকে পড়ে দেয়ালের কাছে চলে গেল। সাইফুল তার গর্দানে কয়েকটা চাপ মারতে সে জ্ঞান হারাল।

অন্য গুণ্ডাটা থামের আড়াল থেকে দেখে তার চোখেও ভেল্কী বলে মনে হয়েছিল। সাথির অবস্থা দেখে সে সাবধান হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে ঝর্ণার একটা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে সাইফুলের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, খবরদার, আর একচুল নড়বেন না, নচেৎ গুলি করতে বাধ্য হব। তারপর ঝর্ণাকে বলল, আপনার স্বামীকে যদি বাচাতে চান, তা হলে চলুন আমার সঙ্গে।।

ঝর্ণা তখন ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। সে সাইফুলের দিকে তাকিয়ে কি করবে না করবে ভাবতে লাগল। গুণ্ডাটা অধৈর্য স্বরে বলল, কুইক।

দেরি দেখে মনিরা কাজের মেয়েটাকে সাইফুল ও ঝর্ণাকে ডাকতে পাঠিয়েছিল । সে বারান্দায় এসে ঐরকম ঘটনা দেখে প্রথমে খুব ভয় পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। তারপর দৌড়ে ফিরে গিয়ে ব্যাপারটা মনিরাকে জানাল।

শুনে নাজনীন বলল, আম্মা তাড়াতাড়ি থানায় ফোন করে দাও, আমি ওদিকে দেখছি। কথা শেষ করে নাজনীন যখন বারান্দার দরজার পর্দা ফাক করে উঁকি মারল, তখন গুণ্ডাটা ঝর্ণাকে তাগিদ দিয়ে বলছে, আমার সঙ্গে না গেলে আপনার স্বামীকে। কুকুরের মত গুলি করে মারব।

| ঝর্ণা সাইফুলের চোখের দিকে তাকিয়েছিল। বুঝতে পারল, সে তাকে ইশারা করে। যেতে বলছে। ঝর্ণা ধীরে ধীরে পা পা করে এগােচ্ছে, এমন সময় নাজনীনকে মেঝেয়। দেওয়ালের কাছে পড়ে থাকা পিস্তলটার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সাইফল বলল নাজ তুই তাের হাতের লাঠিটা দিয়ে গুণ্ডাটার মাথায় খুব জোরে আঘাত কর।।

গুণ্ডাটার পিছনের দিকে থেকে নাজনীন আসছিল। সেদিক তাকিয়ে সাইফুলকে। কথা বলতে শুনে সত্য-মিথ্যা দেখার জন্য গুণ্ডাটা একবার মুখ ঘুরিয়ে দেখতে গেল। সাইফুল এই সুযােগের অপেক্ষায় ছিল। জাম্প করে উড়ে তার কাছে আসতে চাইল । কিন্তু এই গুণ্ডাটা আগেরটার চেয়ে বেশি চালাক। পিছনে এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে সাইফুলকে উড়ে আসতে দেখে পরপর তিনটে গুলি করল। প্রথম 

দুটো মিস হলেও শেষেরটা সাইফুলের পেটে লাগল। ততক্ষণে সাইফুল তার ঘাড়ের উপর এসে পড়ে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে নাজনীনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, থানায় জলদি ফোন করে দে। তারপর গুটার কানের নীচে ও তলপেটে কয়েকটা ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল।

তখন সাইফুলের রক্তে জামা কাপড় ভিজে মেঝেয় গড়িয়ে পড়ছে। গুণ্ডাটা অজ্ঞান হয়ে যেতে বসে পড়ে একহাতে পেট ধরে একটা চাকরকে দেখতে পেয়ে বলল, রশি দিয়ে এদের হাত-পা শক্ত করে বেঁধে ফেল।

ঝর্ণা এতক্ষণ ঘােরের মধ্যে ছিল। স্বামীর রক্ত দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আল্লাহ গাে একি হল? তুমি রহম কর। তারপর নাজনীনকে বলল, জলদি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল, এক্ষুনি মেডিকেল নিয়ে যেতে হবে। নাজনীন ছুটে বেরিয়ে গেল ড্রাইভারকে গাড়ি বের করার কথা বলতে।

মনিরা থানায় ফোন করে এসে সাইফুলের রক্ত দেখে সেও তাকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, কই দেখি কোথায় গুলি লেগেছে? সাইফুল গুলি খাওয়া জায়গাটা দু'হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে, তবু রক্ত গল গল করে বেরােচ্ছে। সে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, বুবু, ঝর্ণাকে তােমার হাতে তুলে দিচ্ছি, ওর পেটে বাচ্চা আছে, ওদেরকে তুমি দেখাে। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, আল্লাহপাক, তােমার ইশারা ছাড়া কোন কিছু হয়। । তুমি আমাকে ক্ষমা করাে। এদের সবাইকে হেফাজত করাে।

ঝর্ণা স্বামীকে বুকে করে ধরে রেখে বলল, কথা বলতে তােমার কষ্ট হচ্ছে, তুমি ।
এবার চুপ কর।
সাইফুল ঝর্ণার গালে গাল ঠেকিয়ে বলল, প্রিয়তমা আমার, তােমাকে নিয়ে বেশি দিন ঘর সংসার করা আমার ভাগ্যে নেই। তাই আল্লাহ আমার সমস্ত কামনা বাসনা পূরণ করে দুনিয়া থেকে তুলে নিচ্ছেন। ঝর্ণাকে কাঁদতে দেখে বলল, কাদছ কেন? তার। ইচ্ছায় চলে যেতে হচ্ছে। আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা চাও। এবার কান্না থামিয়ে আমাকে বিদায় দাও প্রিয়তমা। ঝর্ণা ভুলে গেল এখানে বড় ননদ, নাজনীন ও চাকর-চাকরানীরা রয়েছে। সে স্বামীর মাথা দু'হাত দিয়ে ধরে তার সারা মুখে চুমাে খেয়ে বলল, বিদায় তােমাকে আমি নিতে দেব না, যেমন করে থােক ইনশাআল্লাহ বাচাবই। তারপর নাজনীনকে দেখে। বলল, ড্রাইভার এখনও গাড়ি বার করে নি?।

ডাইভার গাড়ি বের করে সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘরে ঢুকে ঝর্ণার কথা। শুনতে পেয়ে বলল, তাড়াতাড়ি চলুন। সাইফুল টেনে টেনে বলল, শুধু শুধু তােমরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছ। তারপর ঝর্ণাকে বলর, খুব পিয়াস লেগেছে, পানি দাও।। নাজনীন শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি নিয়ে এল।

ঝর্ণা গ্লাসটা স্বামীর মুখে ধরতে সাইফুল বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে আলহামদুলিলা বলে ডান হারাল। সাইফলকে চুপ করে যেতে দেখে সবাই মিলে ধরাধরি করে গাড়িতে ত মেডিকেলে রওয়ানা দিল। চাকর-চাকরানী ছাড়া সবাই মেডিকেলে গেল। যাওয়ার সময় মনিরা চাকরদের বলল, পুলিশ এলে তাদেরকে ঘটনাটা বলে এদেরকে নিয়ে যেতে বলবে।

মেডিকেল আসার পর ডাক্তারা সাইফুলকে পরীক্ষা করে বলল, হি ইজ ডেড ।।
শুনে মনিরা ও নাজনীন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। 
আর ঝর্ণা প্রথমে কয়েক সেকেণ্ড থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তারপর না ..... বলে স্বামীর বুকের উপর আছড়ে পড়ে জ্ঞান হারাল।#

এখানেই এই ভালোবাসার গল্পটা সমাপ্ত করা হয়েছে।

যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে আমাদের এই গল্পটি তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দেবেন

আর যদি এরকম আরো গল্পের বই পেতে চান তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন আমরা আপনাদের জন্য আরও একটি গল্পের বই দিয়ে অ্যাপস তৈরি করে দেব।

ধন্যবাদ ভালো থাকুন সুস্থ থাক