বাবা ও ছেলেকে নিয়ে একটি গল্প হৃদয়ছোঁয়া কষ্টের গল্প লিখে দিলাম, যা মানুষের মনকে নাড়া দেবে

বাবা ও ছেলেকে নিয়ে একটি গল্প হৃদয়ছোঁয়া কষ্টের গল্প লিখে দিলাম, যা মানুষের মনকে নাড়া দেবে

বাবা ও ছেলেকে নিয়ে একটি গল্প হৃদয়ছোঁয়া কষ্টের গল্প লিখে দিলাম, যা মানুষের মনকে নাড়া দেবে

বাবার শেষ চিঠি

সন্ধ্যার নরম আলো জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর পড়ছে। বিছানায় শুয়ে থাকা বৃদ্ধ আহসান সাহেব জানালার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখে একরাশ শূন্যতা। তিনি জানেন, সময় খুব বেশি নেই। ডাক্তার বলেছে, তার দিন গুনতে হবে এখন থেকে।  

ছোট ছেলেটা, আবির, যখন খুব ছোট ছিল, তখন একদিন তার মা মারা যায়। আহসান সাহেব নিজের স্বপ্ন, নিজের ইচ্ছা সব বিসর্জন দিয়ে ছেলেটাকে বড় করেছেন। মায়ের অভাবটা কোনোভাবে বুঝতে দেয়নি। দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, যাতে আবিরের কোনো কষ্ট না হয়। ভালো স্কুলে পড়িয়েছেন, শহরের সবচেয়ে নামী কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।  

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবির বদলে যেতে লাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর তার বন্ধুবান্ধব বদলে গেল, চিন্তাভাবনা বদলে গেল। শহরের চাকচিক্যময় জীবনের দিকে সে আসক্ত হয়ে পড়ল। বাবার সঙ্গে কথাবার্তা কমিয়ে দিল। একসময় সে শহরের নামী এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেল, আর একদিন বলল,  

— "বাবা, আমি আর এই গ্রামে থাকতে পারব না। এখানে থাকলে আমার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। আমি শহরে থাকব।"  

আহসান সাহেব কিছু বলেননি। শুধু মৃদু হাসি দিয়ে মাথা নেড়েছিলেন।  

আবির চলে গেল। প্রথম প্রথম ফোন করত, খোঁজ নিত। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাও কমে গেল। বিয়ের পর তো একদমই ভুলে গেল বাবাকে। বৃদ্ধ বাবা শুধু একা একা দিন গুনতে লাগলেন।  

আজ চার বছর হয়ে গেছে, ছেলের কোনো খবর নেই। আহসান সাহেব বিছানায় শুয়ে থাকেন, একা একা। গ্রামে সবাই জানে, তিনি খুব অসুস্থ। তবু আবিরের কোনো খবর নেই।  

আজকের সন্ধ্যায় তিনি অনেক কষ্ট করে উঠে বসলেন। কাঁপা হাতে একটা চিঠি লিখলেন—  

_"প্রিয় আবির,_  

_আমি জানি, তুমি খুব ব্যস্ত। তোমার সময় নেই। তবুও এই বৃদ্ধ বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল, তোমাকে আর একবার দেখার। কিন্তু হয়তো সেই সৌভাগ্য আমার হবে না। যখন এই চিঠি তুমি পাবে, তখন আমি হয়তো আর থাকব না। তোমার জন্য কিছু রেখে যাচ্ছি না, শুধু মনে রেখো, একসময় একজন ছিল, যে তোমার জন্য নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিতে পারত।"_  

চিঠিটা তিনি টেবিলে রেখে জানালার দিকে তাকালেন। চোখের কোনা বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। বাইরে সূর্যটা অস্ত যাচ্ছিল, যেন তার জীবনও একসঙ্গে নিভে যাচ্ছে।  

পরের দিন সকালে গ্রামের লোকেরা দেখল, আহসান সাহেব নিথর হয়ে পড়ে আছেন। হাতে সেই চিঠিটা শক্ত করে ধরা।  

শহরে থাকা আবিরের কাছে খবর পৌঁছাল অনেক দেরিতে। যখন সে ছুটে এলো, তখন বাবাকে আর দেখতে পেল না। শুধু সেই শেষ চিঠিটা পেল।  

চিঠিটা হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল আবির। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না।  

বাবা চলে গেছেন… তাকে আর কখনো ডাকার সুযোগ হবে না…  

---

**শেষ কথা:** বাবা-মায়ের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ। তাদের কষ্ট বুঝতে বুঝতে যেন খুব দেরি না হয়ে যায়। সময় থাকতে ভালোবাসাটা ফিরিয়ে দিতে শিখুন। ❤️